মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর যাই হোক
না কেনো, একটা দিক
থেকে বিশ্বে প্রথম সারিতে,
তা হলো এখানকার উচ্চতর
শিক্ষা ব্যবস্থা। মার্কিন গ্র্যাজুয়েট
পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা (অর্থাৎ
পিএইচডি বা মাস্টার্স) বেশ সমৃদ্ধ,
এবং শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট খাটতে,
পড়তে, লিখতে, ও উপস্থাপন করতে হয়।
অন্যান্য অনেক দেশে যেমন
কোর্সওয়ার্ক ছাড়াই সরাসরি ৩
বছরে পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে দেয়া হয়,
এখানে তা নয়, বরং শুরুতে ২ থেকে ৩
বছরে নানা উচ্চতর কোর্স করার
পরে বাকি ৩ বছর গবেষণা করলে তবেই
পিএইচডি ডিগ্রি মেলে। তাই
মার্কিন উচ্চতর শিক্ষা সারাবিশ্বের
শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ
কাংক্ষিত।
এদেশের উচ্চতর পর্যায়ে অধিকাংশ
ছাত্রছাত্রীই বিদেশী, অন্তত
প্রকৌশল ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে। আমার
সাবেক ভুট্টাক্ষেত বিশ্ববিদ্যালয়
৪০০ গ্র্যাজুয়েট ছাত্রের মধ্যে সম্ভবত
৩৫০ এর বেশি ছিলো বিদেশী। এদের
মধ্যে চীনাদের
সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়।
জনসংখ্যার হিসেবে বাংলাদেশ
থেকে বরং অনেক কমই
আসে এদেশে উচ্চতর পর্যায়ে।
শিক্ষাখাতে মার্কিন সরকার খরচও
করে বিপুল পরিমাণ। উদাহরণ দেই,
আমার সাবেক ভুট্টাক্ষেত
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০
পিএইচডি পর্যায়ের ছাত্রদের
মধ্যে এমন কাউকে দেখিনি, যে পূর্ণ
ফান্ডিং পায়নি। সবাইই হয়
গবেষনা সহকারী,
বা শিক্ষা সহকারী হিসেবে ফান্ড
পায়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই
হারটা একটু কম, কিন্তু তার পরেও
অধিকাংশই ফান্ড পেয়ে থাকে।
ভর্তি প্রক্রিয়া
এবার দেখা যাক, এসব
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির
প্রক্রিয়াটা কীরকম --
আবেদন-
ভর্তির মৌসুম শুরু হয় সাধারণত নভেম্বর
থেকে, আবেদন নেয়া হয়
ডিসেম্বরের
মাঝামাঝি বা জানুয়ারির
মাঝামাঝি পর্যন্ত।
অধিকাংশ জায়গাতেই
যা যা লাগে তা হলো
- স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (একটা রচনা)
- ২ বা ৩টি রেকমেন্ডেশন লেটার
বা সুপারিশপত্র
- টোফেল স্কোর
- (অনেক ক্ষেত্রেই) জিআরই স্কোর
- (কোনো কোনো ক্ষেত্রে)
সাবজেক্ট জিআরই স্কোর
স্টেটমেন্ট অফ পারপাস
(আমি কী হনুরে,
কেনো এখানে আসবো রে, ইত্যাদি)
স্টেটমেন্ট অফ পারপাস
হলো মোটামুটি ২ পৃষ্ঠার একটি রচনা,
যাতে লিখতে হয় নিজের সম্পর্কে,
কেনো এই বিষয়ে আগ্রহ, কেনো এই
বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহ, ইত্যাদি বিষয়
নিয়ে। ভর্তির ক্ষেত্রে এটাই
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ। এটা খুব
সাবধানে লেখা দরকার, বেশ সময়
নিয়ে হলেও। অনেক
ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অন্যদের
থেকে বা নেট থেকে জোগাড়
করা রচনা নিজের
নামে চালিয়ে দেয়,
যা ধরতে পারা যায় খুব সহজেই।
"আমার দেখা সেরা ছাত্র"
রেকমেন্ডেশন লেটার
বা সুপারিশপত্র নিতে হয় শিক্ষকদের
কাছ থেকে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো,
আমাদের
দেশে শিক্ষকেরা চিঠিগুলো লেখেন
না, সাধারণত ছাত্রকেই
লিখে আনতে হয় নিজের
রেকমেন্ডেশন, আর শিক্ষকেরা কেবল
তা সই করে দেন। মার্কিন
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়ার
সাথে জড়িত অনেকের
সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা এই
ব্যাপারটি জানেন ভালোই। তাই
ভারতীয় উপমহাদেশের
দেশগুলো হতে আসা রেকমেন্ডেশন
তারা খুব একটা পাত্তা দেন না।
অনেক ক্ষেত্রেই "এই ছাত্র আমার
দেখা সেরা ছাত্র"-টাইপের
লেখা একই শিক্ষক একই বছরে একাধিক
ছাত্রকে লিখে দেন,
তাতে বোঝা যায়, কপিপেস্ট
চিঠিতে সই করেছেন মাত্র।
টেস্ট স্কোর
টোফেল বা জিআরই স্কোর মূলত
ব্যবহার করা হয় আবেদনকারীদের
প্রাথমিক বাছাইয়ে, স্কোরের
নিম্নসীমা দিয়ে অনেক
আবেদনকারীকে শুরুতেই বাদ
দেয়া হয়। এটা একেক
বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম। অনেক
জায়গায়
বলে দেয়া থাকে কতো স্কোর
লাগবে। আবার অনেক
জায়গাতে জিআরই স্কোর
দেয়া লাগে না।
কিছু কিছু বিষয়, যেমন কম্পিউটার
বিজ্ঞানে বিষয়ভিত্তিক জিআরই
স্কোর চাওয়া হয়। খেয়াল
রাখতে হবে, এই
স্কোরটি কি রেকমেন্ডেড
নাকি রিকোয়ার্ড। রেকমেন্ডেড
মানে "দিলে ভালো" , আর
রিকোয়ার্ড মানে দিতেই হবে।
------
বাছাই
যাহোক, আবেদন করার পর শুরুতে অনেক
ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির
সাথে সম্পৃক্ত অফিস
সহকারীরা টোফেল বা জিআরই-র
কাঁচি চালিয়ে কিছু আবেদনপত্র
কমিয়ে ফেলে। তার পর
যা বাকি থাকে সেগুলো যায়
ভর্তি কমিটির কাছে।
ভর্তি কমিটিতে সাধারণত
থাকে অধ্যাপকেরা, আর অনেক সময়
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কয়েকজন
প্রতিনিধিও থাকে।
শিক্ষকেরা প্রধানত স্টেটমেন্ট অফ
পারপাস নামের
রচনাটি দেখে বোঝার চেষ্টা করেন
এই ছাত্রটি কেমন হতে পারে। অনেক
ক্ষেত্রেই আবেদনপত্রগুলোকে ৩
ভাগে ভাগ করা হয় শিক্ষকদের
মূল্যায়নের ভিত্তিতে, (১) হ্যাঁ (২)
না (৩) দেখা যাক।
হ্যাঁ গ্রুপে যারা আছে,
তাদেরকে শুরুতেই ভর্তি ও
ফান্ডিং এর প্রস্তাব পাঠানো হয়।
ভালো ছাত্রদের টেনে আনার জন্য
অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্লেন
ভাড়া/হোটেল ভাড়া দিয়ে এসব
ছাত্রদের
বেড়াতে নিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে।
(আমার সাবেক গ্রুপের এক
ছাত্রকে জাপান
থেকে এনেছিলো)। ছাত্ররাও এসময়
মুফতে একাধিক জায়গায়
ঘুরে বেড়ায়, অধ্যাপক ও
পুরানো ছাত্রদের সাথে কথা বলে,
তার পর সিদ্ধান্ত নেয় কোথায়
ভর্তি হলে। এটা অনেক সময়
ফেব্রুয়ারি মাসেই জানানো হয়।
প্রথম দফায় যাদের প্রস্তাব
দেয়া হয়েছে, তারা কেউ কেউ
রাজী না হলে ২য় দফায় ভর্তির
প্রস্তাব দেয়া হয়। এই দফার প্রস্তাব
আসে অনেক সময় মার্চ বা এপ্রিলে।
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
অলিখিত
চুক্তি অনুসারে ফান্ডিং সহ ভর্তির
প্রস্তাব গ্রহন করলে এপ্রিল মাসের ১৫
তারিখের মধ্যেই লিখিত কমিটমেন্ট
দিতে হয়। ১৫ তারিখ
পেরিয়ে গেলে আর ভর্তির
সিদ্ধান্ত পালটানো যায় না।
পরামর্শ
১) স্টেটমেন্ট অফ পারপাস
ভালো করে লিখুন। হুট করে লিখবেন
না। মাস খানেক সময়
নিয়ে ভালো করে লিখুন। নেট
থেকে বা বড় ভাইদের
থেকে নেয়া "চোথা" ব্যবহার করবেন
না। ওগুলো ভর্তি কমিটির লোকজন
দেখলেই চিনতে পারে।
২) রেকমেন্ডেশন লেটার
ভালো করে লিখতে বলুন শিক্ষককে।
তাতে আপনি ঐ শিক্ষকের ক্লাসে/
কোর্সে কেমন করেছেন,
আপনি নিজের উদ্যোগে কাজ
করতে পারেন, এই রকমের
কথা লিখতে বলুন।
৩) টেস্টগুলো ছাত্রাবস্থাতেই
দিয়ে ফেলুন। ছাত্রাবস্থা শেষ
করে চাকুরিরত অবস্থায় টেস্ট
দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
0 মন্তব্য(গুলি):